জ্যাঁ পিয়াজে একজন সুইস মনোবিজ্ঞানী যিনি শিশুদের মানসিক বিকাশ নিয়ে গবেষণা করে আধুনিক মনোবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি মনে করতেন, শিশুরা তাদের পরিবেশের সাথে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে এবং এই জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত

পিয়াজে শিশুদের জ্ঞানমূলক বিকাশকে চারটি প্রধান ধাপে ভাগ করেছেন, প্রতিটি ধাপ নির্দিষ্ট বয়সসীমা ও মানসিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত

  • শিশুরা ইন্দ্রিয় ও মোটর ক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবেশকে বোঝার চেষ্টা করে।

  • এই স্তরে প্রধান অর্জন হলো বস্তু স্থায়িত্ব (Object Permanence), অর্থাৎ কোনো বস্তু চোখের আড়ালে গেলেও তা বিদ্যমান আছে—এই ধারণার বিকাশ ঘটে।

  • শিশুরা মূলত স্পর্শ, দেখা, শোনা, ও নড়াচড়ার মাধ্যমে শেখে

  • শিশুরা ভাষা ও প্রতীক ব্যবহার করতে শেখে, কল্পনা ও অনুকরণমূলক খেলায় অংশ নেয়।

  • চিন্তাভাবনা এখনো যৌক্তিক নয়, বরং স্বতঃস্ফূর্ত ও আত্মকেন্দ্রিক (Egocentric)।

  • তারা অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারে না এবং একসাথে একাধিক দিক বিবেচনা করতে অক্ষম (Centration)।

  • Conservation ধারণা এখনো তৈরি হয়নি, অর্থাৎ আকার বা রূপ বদলালেও পরিমাণ একই থাকে—এটা তারা বুঝতে পারে না

  • যৌক্তিক চিন্তাভাবনা শুরু হয়, তবে তা কেবলমাত্র বাস্তব ও দৃশ্যমান বস্তু বা ঘটনা নিয়ে।

  • শিশুরা ConservationSeriation (ধারাবাহিকভাবে সাজানো), Classification (বিভাগীকরণ), ও Reversibility (পূর্বাবস্থায় ফেরা) ধারণা আয়ত্ত করে।

  • তারা বিভিন্ন দিক বিবেচনা করতে পারে এবং সমস্যার সমাধানে যুক্তি প্রয়োগ করতে শেখে

  •  

  • বিমূর্ত চিন্তাভাবনা ও যুক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা অর্জিত হয়।

  • কল্পনাপ্রবণ ও হাইপোথেটিক্যাল (Hypothetical) চিন্তা করতে পারে; “যদি-তবে” ধরনের সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হয়।

  • বিজ্ঞান, গণিত, নৈতিকতা ইত্যাদি জটিল ধারণা নিয়ে ভাবতে পারে

  • স্কিমা (Schema): শিশুদের চিন্তার মৌলিক কাঠামো, যা নতুন তথ্য গ্রহণ ও সংগঠনে সহায়তা করে।

  • অ্যাসিমিলেশন (Assimilation): নতুন অভিজ্ঞতাকে বিদ্যমান স্কিমার সাথে মানিয়ে নেওয়া।

  • অ্যাকমোডেশন (Accommodation): নতুন অভিজ্ঞতার আলোকে স্কিমা পরিবর্তন বা নতুন স্কিমা তৈরি করা।

  • সমন্বয় (Equilibration): অ্যাসিমিলেশন ও অ্যাকমোডেশনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা, যা মানসিক বিকাশে সহায়ক

  • শিশুরা তাদের নিজস্ব গতিতে শেখে; তাদের মানসিক বিকাশের ধাপ অনুযায়ী শিক্ষাদান করা উচিত।

  • শেখার ক্ষেত্রে অনুসন্ধান-ভিত্তিক ও হাতে-কলমে কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ।

  • শিশুদের চিন্তাভাবনার সীমাবদ্ধতা বুঝে পাঠ পরিকল্পনা করা দরকার

  • কিছু গবেষক মনে করেন, পিয়াজের ধাপগুলো সব শিশুর জন্য একেবারে নির্দিষ্ট নয়, এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ।

  • শিশুরা অনেক ক্ষেত্রেই পিয়াজে বর্ণিত ধাপের চেয়ে আগে বা পরে নির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

জ্যাঁ পিয়াজের জ্ঞানমূলক বিকাশের তত্ত্ব শিশুদের মানসিক বিকাশ বোঝার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অবদান। এই তত্ত্ব শিশুদের শেখার ধরন, চিন্তাভাবনার পরিবর্তন, ও শিক্ষাব্যবস্থায় কিভাবে কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়—এসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়

Similar Posts